পিএসসি-র মাধ্যমে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে এই প্রথম নিয়োগ হচ্ছে


মহিলা সুপারভাইজার পদে নেওয়া হবে প্রায় তিন হাজার কর্মী



বিস্তারিত জানতে ভিডিওটি অবশ্যই দেখুন  - Watch Video



গত ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে রাজ্যে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিতে কোনও সুপারভাইজার নিয়োগ হয়নি। প্রায় তিন হাজার সুপারভাইজার নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। শুধু মহিলারাই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে সুপারভাইজারের কাজ করতে পারেন। এখন দুই হাজারের কম সুপারভাইজার আছেন। এই প্রথম পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে সুপারভাইজার নিয়োগ করা হচ্ছে। ফলে এবার সুপারভাইজার নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। পিএসসি গত সেপ্টেম্বর মাসে নিয়োগের প্রাথমিক লিখিত পরীক্ষা নিয়েছে। 




পরীক্ষায় সফল প্রার্থীদের তালিকা আগামী মার্চ মাসে প্রকাশ করা হতে পারে বলে সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে। তারপর এপ্রিল মাসে চূড়ান্ত লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হবে। লিখিত পরীক্ষায় সফল প্রার্থীদের ইন্টারভিউ নিয়ে সুপারভাইজার পদে নিয়োগ করা হবে। সরকারের নতুন নীতি অনুযায়ী ৫০ শতাংশ পদে সুপারভাইজার নিয়োগ করা হবে নতুন প্রার্থীদের থেকে। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের মহিলা কর্মীদের মধ্যে থেকে বাকি ৫০ শতাংশ সুপারভাইজার নিয়োগ করা হবে। অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের মধ্যে থেকে নিয়োগ প্রক্রিয়াও হবে পিএসসি-র মাধ্যমে। অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের অবশ্য প্রাথমিক লিখিত পরীক্ষা দিতে হয়নি। তাঁরাও লিখিত পরীক্ষা ও ইন্টারভিউর মাধ্যমে সুপারভাইজার পদে পদোন্নতির সুযোগ পাবেন।
রাজ্যের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিতে কর্মী ও সহায়িকা মিলিয়ে এখন দুই লক্ষের কিছু বেশি মহিলা কর্মী কাজ করেন। অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও সহায়িকাদের বেতন এখন যথাক্রমে সাড়ে সাত হাজার ও সাড়ে পাঁচ হাজার টাকার আশপাশে। সেখানে সুপারভাইজররা সরকারি স্থায়ী কর্মীদের হারে বেতন ও অন্যান্য সব সুযোগসুবিধা পান। নতুন বেতন হার অনুযায়ী একজন সুপারভাইজারের চাকরির শুরুতেই বেতন হবে প্রায় ৩৬ হাজার টাকা। স্বাভাবিকভাবে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের মধ্যে সুপারভাইজার হওয়ার আগ্রহ রয়েছে। এতদিন এভাবে পদোন্নতির এই সুযোগ তাঁদের ছিলই না। সমাজকল্যাণ দপ্তরে ইতিমধ্যে অনলাইনে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মীদের কাছ থেকে আবেদনপত্র নিয়েছে। সুপারভাইজার পদে নতুন আবেদনকারীদের ন্যূনতম শিক্ষাগত ছিল স্নাতক। অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের কাজের অভিজ্ঞতার বছরের নিরিখে মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক পাশ হলেই সুপারভাইজার পদে চাকরির আবেদন করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের জন্য আলাদা পরীক্ষা নিতে পারে পিএসসি। নতুন প্রার্থীদের চূড়ান্ত পরীক্ষায় চারটি পেপারে একশো করে মোট চারশো নম্বরের বিবরণমূলক লিখিত পরীক্ষা দিতে হবে। ইংরেজি, বাংলা বা কয়েকটি নির্দিষ্ট ভাষার মধ্যে একটি, অঙ্ক ও জেনারেল নলেজ ও জেনারেল ইন্টেলিজেন্সের উপর পরীক্ষা হবে। লিখিত পরীক্ষায় সফল প্রার্থীরা ৫০ নম্বরের ইন্টারভিউ দেবেন।
সমাজকল্যাণ দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে ২০০৩ সাল নাগাদ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে শেষবার সুপারভাইজার নিয়োগ করা হয়েছিল। দীর্ঘদিন নিয়োগ না হওয়া সুপারভাইজারের সংখ্যা এখন প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। নিয়ম অনুযায়ী একজন সুপারভাইজারের দায়িত্বে ২৫টি কেন্দ্র থাকার কথা। সেখানে এখন একজনকে শতাধিক কেন্দ্রের দায়িত্ব নিতে হচ্ছে। বাম আমলে সুপারভাইজার পদে নিয়োগ দপ্তর সরাসরি করত। তখন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন ছিল। সুপারভাইজার নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রচার সেভাবে না করায় অনেকেই চাকরির ব্যাপারে কিছুই জানতে পারতেন না। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারি ফেডারেশনের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সুপারভাইজার সংগঠনের নেত্রী জয়ন্তিকা দাস জানিয়েছেন, তৃণমৃল কংগ্রেস সরকার পিএএসসি-র মাধ্যমে স্বচ্ছতার মধ্য দিয়ে নিয়োগের যে ব্যবস্থা করেছেন, তাকে স্বাগত। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলি যাতে সুষ্ঠুভাবে চলে, তার জন্য দ্রুত আরও সুপারভাইজার নিযুক্ত করা খুবই প্রয়োজন।
অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে মহিলা কর্মীরা যে কাজকর্ম করেন, তার উপর নজর রাখতে হয় সুপারভাইজারদের। কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, সচেতন করার পাশাপাশি দপ্তরে রিপোর্টও পাঠাতে হয় তাঁদের।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন